জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে সাময়িক অব্যাহতিপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ দলীয় নেতাদের প্রতি সবিনয় আহ্বান জানিয়েছেন—তিনি সমকামী নন, বরং একজন মাদ্রাসাশিক্ষিত হাফেজ। শনিবার (১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই দাবি জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে ভুল ধারণা দূর করতে স্পষ্ট বিবৃতি দেওয়ার অনুরোধ করেন।
মুনতাসির মাহমুদ জানান, গত ১২ অক্টোবর তাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিলেও দলীয় নেতারা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তার ভাষায়, “আমি যে সমকামী মুনতাসির নই, বরং মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ মুনতাসির মাহমুদ, এটা পরিষ্কার করে একটা বিবৃতি দেন। কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছি ১৯ দিন আগে, কিন্তু দলের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। বারবার কল ও মেসেজ করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে দল থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অথচ মূল অপরাধীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা কমিটিতে অভিযোগ দিয়েও ন্যায়বিচার পাইনি। এরপর কিছু হলুদ সাংবাদিক বা উপদেষ্টাদের প্রভাবে আমার ছবি দিয়ে নিউজ করেছে—যেখানে বলা হয়েছে, সমকামিতার অভিযোগে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে আমার পরিবার পর্যন্ত অপমানের শিকার হয়েছে।”
মুনতাসির অভিযোগ করেন, এনসিপির কিছু নেতা সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন। “আমার নামে বিবৃতি দিলে নাকি আমি জনপ্রিয় হয়ে যাব—এমন অজুহাতে তারা চুপ আছে,” বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, এনসিপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পাশে আছেন, প্রতিদিন দেশজুড়ে বহু মানুষ ফোন করে তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ দলের সিনিয়র নেতাদের “জুলাই বিক্রি করা” নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
তার অভিযোগ, “এনসিপি তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাসের মতো ব্যবহার করে। তাদের খাটিয়ে নেয়, কিন্তু সমর্থন দেয় না। যারা পরিশ্রম করে সংগঠন গড়ে তোলে, তাদের জায়গায় অন্যদের বসিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।”
মুনতাসির মাহমুদ আরও বলেন, “আমি জুলাই গাদ্দারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম, এবং সেই লড়াই চলবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনাকে কিছু নেতা নষ্ট করেছে, অথচ দায় নিতে হচ্ছে তৃণমূলকে।”
তিনি নিজের সততা ও রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “আমি সারাজীবন সৎভাবে রাজনীতি করেছি। বাংলাদেশের মানুষই আমার মূল্যায়ন করবে।”
শেষে তিনি আহ্বান জানান, “যারা আমাকে চেনেন বা জানেন আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে, তারা যেন সত্য প্রকাশ করেন। আমি যে গে বা সমকামী নই, আমি যে হাফেজ মুনতাসির মাহমুদ—এটা মানুষকে জানিয়ে দিন। এমন মিথ্যা অপবাদ সহ্য করার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।”
উল্লেখ্য, মুনতাসির মাহমুদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি) ও নয়াদিল্লির সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
