রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ছাড়া বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখেই থাকবে বলে জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া। রোববার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া বলেন, নৃশংস গণহত্যার মুখে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার তাঁদের প্রত্যাবাসনে কার্যকর কোনো নীতি, কৌশল কিংবা রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়নি। বরং প্রতিবেশীদের স্বার্থে পরিচালিত নীতিমালাগুলো বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়েছে।
বর্তমানে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথমবারের মতো একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে—তাতে আপত্তির কারণ কী?
হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এটি ইন্ডিয়াকে প্রদত্ত করিডোরের মতো কোনো ভূ-রাজনৈতিক ছাড় নয়। বরং একটি নিরস্ত্র, নিরাপদ এলাকা বা পথ—যা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বেসামরিক লোক, ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার নিরাপদ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই সংকটের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের বোঝাপড়া অস্পষ্ট হওয়ার কথা নয়, কারণ তাঁরাও জানেন এ ধরনের ‘যুদ্ধ বহির্ভূত সামরিক কার্যক্রম’ (Military Operations Other Than War) বহু দেশে হয়েছে এবং হয়। যেমন ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আঘাত হানা ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের পর যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘অপারেশন সি এঞ্জেলস’।
রোহিঙ্গা সংকট সরাসরি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে যুক্ত। সশস্ত্র বাহিনী বর্তমান নেতৃত্ব যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে, তাহলে তাঁরা তাঁদের নিজস্ব লক্ষ্য, নীতি ও পরিকল্পনা জাতিকে স্পষ্টভাবে জানাক। এতে জনগণ আশ্বস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছেও সঠিক বার্তা পৌঁছাবে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো কৌশলগত পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে কার্যকর কৌশলগত যোগাযোগ বা স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অপরিহার্য।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা না গেলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের রাষ্ট্রহীন পরিত্যক্ত মানুষদের ভাগাড়ে পরিণত হবে। চলমান ‘পুশ ইন’ কর্মসূচি এরই ইঙ্গিত বহন করে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই উদ্যোগকে পরিশীলিত, নির্বিঘ্ন ও সফল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ক্ষতি করতে চায় এমন কোনো বৈরী রাষ্ট্রের অপপ্রচারের অনুসারী বা বাহন হওয়া যাবে না।