লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে সাধুবাদ জানিয়েছে জামায়াত। তবে, বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের দ্বিতীয় ধাপের মুলতবি সভা প্রতীকী বয়কট করেছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের মুলতবি অধিবেশনের দুপুরের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলাম। সেটা আমাদের দলীয় অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছেন পুরস্কার আনার জন্য, টাকা ফেরত আনার জন্য। ওনার উপস্থিতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়েও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বলেছিলেন। সেটাও আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা ভালো হত বাংলাদেশে এসে আলোচনা করে তারিখের বিষয়ে পুনরায় বলা। কিন্তু সেটা করেন নি।
যৌথ বিবৃতিকে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা উল্লেখ করে তাহের বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন দেশে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বা সংসদের প্রতিনিধিত্বকারীদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি হয়। এখানে দেশে একশয়ের বেশি দল আছে। তাহলেতো দেশে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হবে, ওনি (প্রধান উপদেষ্টা) যার সঙ্গে কথা বলবেন, এটা যৌথ বিবৃতি করতে হবে। এটা নজিরবিহীন, প্রপার ছিল না। এতে অন্যান্য দল বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে আমাদের আপত্তি। বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য।
আমাদের মনে হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে সংস্কার কমিশন খুব এগোতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মূষিক প্রসবে দাঁড়াবে। সে কারণে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গতকাল আসিনি।
মঙ্গলবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন উল্লেখ করে তাহের বলেন, কাল দুপুরে পরে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি, ওনি (প্রধান উপদেষ্টা) কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন ওনার সরকার নিরপেক্ষ, ওনারা কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ঝুঁকে নেই। আগামীতে এসব ব্যাপারে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন এবং যত্নবান হবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকের বৈঠকে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা কিছুতে অচল অবস্থার সৃষ্টি হোক চাই না। সরকারে সহযোগিতা করেছি সবসময়। কিন্তু ব্যত্যয় হলে কথা বলতে হবে।
নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে জামায়াত। তাহের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে (স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হবে) দেখলাম বলতেছেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়ে গেছে। আমার কাছে মনে হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি সেটা বুঝেন না, যিনি একটা একমাসেও একটি ভবনের তালা খুলতে পারেন না, তিনটি সংসদীয় আসনের কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন, সেটা বিস্ময়ের ব্যাপার। আমি ওনাকে সংযতভাবে কথা বলার অনুরোধ করছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি হবে, এটা বুঝার জন্য অনুরোধ করছি।