জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর চট্টগ্রাম-উত্তর জেলার রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। ৫ আগস্টের পর থেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
সে লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনী প্রচার কাজ শুরু করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সব কটি রাজনৈতিক দল চট্টগ্রামকে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় তিনটি ভাগে ভাগ করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এর মধ্যে উত্তর জেলা সবচেয়ে বড় সাতটি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী)।
আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাতটি আসনের ছয়টিতেই বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলটির এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। হাটহাজারী আসনে ফ্যাক্টর হবে হেফাজতে ইসলাম। যদিও ধর্মীয় সংগঠনটি অরাজনৈতিক ধারা এখনো বজায় রেখেছে। তবে তাদের ভোটব্যাংক যে কোনো রাজনৈতিক দলের জয়-পরাজয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই)
৫ আগস্ট দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে এক সময়ের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
চট্টগ্রাম-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোনসহ নানা কারণে আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সক্রিয় চট্টগ্রাম-উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী।
এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে লবিং করছেন ক্লিপটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এমডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।
বিএনপির একঝাঁক প্রার্থীর মধ্যে বেশ চাপমুক্ত অবস্থানে আছেন জামায়াতের একক প্রার্থী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় থাকছেন তিনি। এ ছাড়া জামায়াতের কর্মসূচিগুলোতে তাকে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভোটারদের মাঝে। প্রচারণার মতো নির্বাচনেও বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী অংশ নিলে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে জামায়াতে ইসলামী। এনসিপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এখনো প্রচারণায় নামেনি।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)
বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ফটিকছড়ি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের ভরা যৌবনেই দলটির ক্যাডারদের মহড়া প্রতিরোধ করে আলোচনায় আসে ফটিকছড়ির ভুজপুর। আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের ফেলে যাওয়া অন্তত ২০০ মোটরসাইকেল, ১০টি গাড়ি ও পিকআপ জ্বালিয়ে দেন বিএনপি ও জামায়াতের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। যদিও ২০০৮ সাল থেকে কারসাজির নির্বাচনে বরাবরই জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থীরা। ২০০৮ সাল থেকে এই আসনে ভোট ছাড়া এমপি হন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে তরিকতকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে এমপি ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে।
আওয়ামী লীগের পতনের পর নজিবুল বশর ও সনি দুজনই পালিয়েছেন। এখন নির্বাচনী মাঠে খেলোয়ার বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামী। তবে এলাকাটিতে ছোট-বড় অসংখ্য মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকায় ইসলামী বেশ কয়েকটি দলের তৎপরতা আছে। তাদের থেকেও সম্মিলিতভাবে একজন প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি এখনো।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এই আসন থেকে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী আলোচনায় রয়েছেন।
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শিল্পপতি সারোয়ার আলমগীরের নাম আলোচনায় রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন সরোয়ার আলমগীর। দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিসহ এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নজর কাড়ছে সবার।
বিএনপির এক হালি মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে একক প্রার্থী নিয়ে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যক্ষ মো. নুরুল আমিন এই আসনের একক প্রার্থী হয়েছেন। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের মাঝে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মাদরাসা অধ্যুষিত এলাকাটিকে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায় করতে পারলে বিএনপির যে কোনো প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবেন জামায়াতের নুরুল আমিন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)
বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলাটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮-এর সাজানো নির্বাচনেও এখান থেকে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের একতরফা ভোট, ১৮ সালের রাতের ভোট আর ২০২৪-এর ‘ডামি নির্বাচনে’ জয়ী ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতাকে। তবে ফ্যাসিবাদের পতনের পর এবার সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যেই হবে ভোটের মূল লড়াই।
এই আসন থেকে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বেলায়েত হোসেন। টানা ১৬ বছর ধরে মাঠে রাজনীতিতে সক্রিয় হামলা, মামলা ও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। তার পাশাপাশি সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা ও আমেরিকা প্রবাসী বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান মিল্টনও মনোনয়ন পেতে মরিয়া। তবে মোস্তফা কামাল পাশা বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আমির আলাউদ্দিন শিকদারকে এই আসনের এমপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দলটি। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে দ্বীপবাসীর মন জয় করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড কমিটি মহল্লা কমিটি থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্টও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন তিনি। ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনেরও প্রার্থী আছেন আসনটিতে।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-পাহাড়তলী)
শিল্প জোন হিসেবে সীতাকুণ্ডের গুরুত্ব সব দলের কাছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর আসছে নির্বাচনে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি আর জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও এই আসনটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী। ফলে এখান থেকে নতুন করে কেউ মনোনয়ন চাচ্ছেন না এখন পর্যন্ত।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির ডাকা আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে সীতাকুণ্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। মাসের পর মাস ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অচল করে রাখেন তারা, যার নেতৃত্ব দেন আসলাম চৌধুরী। এরই জের ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষে পড়েন তিনি। ২০১৬ সালে ঠুনকো মামলায় গ্রেপ্তারের পর থেকে হাসিনা পালানোর আগ পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন আসলাম চৌধুরী। এই আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থীও হবেন লায়ন আসলাম চৌধুরী।
অন্যদিকে এই আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ আনো য়ার সিদ্দিক চৌধুরী। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আনোয়ার সিদ্দিক ইসলামী ছাত্রশিবিরের উত্তর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে স্থানীয়ভাবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ)
হাটহাজারী উপজেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর দুটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৫ আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পরপর তিনটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। ২০০৮ সাল থেকে সাজানো সবকটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় অনেকটা মুখ লুকিয়ে চলাচল করেন তিনি। পুরোনো ভোটব্যাংক এবার প্রকাশ্যে আনতে চায় বিএনপি। তবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটিও এখানে। অরাজনৈতিক দল হলেও যে কোনো প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখবে হেফাজত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির তিন কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন চাইবেন। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং হাটহাজারী থেকে একাধিকবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে। এ ছাড়া এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল দিদার আলম, ইসলামী ফ্রন্টের মোখতার আহমদ নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ইসলামিক দলগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে জোট গঠনের ওপর নির্ভর করছে তাদের প্রাপ্তি।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)
স্বাধীনতার পর থেকেই আসনটি চৌধুরী পরিবার অর্থাৎ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের দখলে। তিনি যখন যে দলে গেছেন সেই দলই জয়লাভ করেছে এই আসন থেকে। ২০০৮ সালে সাজানো নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরী। যদিও তিনিও চৌধুরী পরিবারেরই সদস্য। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের বিচারিক হত্যার শিকার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এবার এই আসনে বিএনপির কান্ডারী হতে চান তার ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে মনোনয়ন দৌড়ে গিয়াস কাদেরের প্রধান বাধা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। জুলাই বিপ্লবের আগে বিএনপির কোনো নেতা রাউজানে ঢুকতে না পারলেও হাসিনা পালিয়ে যাবার পর দুই নেতাই আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া। ইতোমধ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে এই এক উপজেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্র থেকে দুই নেতাকেই শোকজ ও সতর্ক করা হয়েছে। তবে মনোনয়ন দৌড়ে নির্যাতিত পরিবার হিসেবে চৌধুরী পরিবারই এগিয়ে থাকবে বলে মনে করেন ভোটাররা।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে সরকার পতনের পর থেকেই মাঠে সক্রিয় রয়েছে শাহজাহান মঞ্জুর। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রার্থীকে সামনে রেখে রাউজানে মিছিলসহ একাধিক সভাও করেছে জামায়াতে ইসলামী।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী)
বোয়ালখালীর একাংশ আর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৭। ২০০৮ সাল থেকে এই আসনের এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বিতর্কিত মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তার অপশাসন আর নির্যাতনের শিকার কম-বেশি সবাই। নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন, পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সবচেয়ে আলোচিত আসন এটি। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার পতন হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটাসহ অবৈধ কার্যকলাপ। আর এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযোগের তীর বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকেই। ভোটাররা চান পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যিনি প্রতিরোধ করতে পারবেন তাকেই আগামী নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়ার কান্ডারী হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি এলডিপিরও শক্ত অবস্থান আছে আসনটিতে। জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে প্রতিযোগিতা করছেন, এলডিপির প্রার্থীও মাঠে নেমেছেন।
এই আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী শক্ত প্রার্থী। মনোনয়ন দৌড়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দীন বাহার, উত্তর জেলা যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, উপজেলা সদস্যসচিব ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত, রাঙ্গুনিয়া বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন।
অন্যদিকে অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামানকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে তাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোট থেকেও প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইসলামী দলগুলো সম্মিলিতভাবে প্রার্থী দিলে বিএনপির জন্য মাথাব্যথার কারণ হবে। এ ছাড়া এলডিপির নুরুল আলম এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এলে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামও প্রার্থী হবেন।