ইসরাইল প্রয়োজনীয় শর্ত পুরণে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য। স্থানীয় সময় সোমবার এক জরুরি ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরাইলকে গাজার বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া আরো কিছু শর্তের কথা জানান তিনি। যার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এবং জাতিসংঘকে সাহায্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেওয়া। অন্যথায় যুক্তরাজ্য সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সম্মিলিত শান্তি পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
স্টারমারের মতে, ‘মানবিক বিপর্যয় এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববাসী শিশুদের দুর্দশা দেখছে। জাতিসংঘকে আবারো ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে। ত্রাণ পাঠানো আবার শুরু করতে হবে। শিশুদের না খাওয়ার যে হৃদয়বিদারক ছবি আমরা দেখছি, তা আর চলতে পারে না।’
তবে সরকারের অভ্যন্তরেই এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ও জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড স্বীকৃতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।
অন্যদিকে চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস, প্রযুক্তিমন্ত্রী পিটার কাইল ও লেবার ফ্রেন্ডস অব ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে এই স্বীকৃতি হামাসকে ‘পুরস্কৃত’ করার সমান হবে।
স্টারমারের এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের সমর্থন। তাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এর আগে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জি৭-এর মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম দেশ যারা এই সিদ্ধান্ত নেয়।
স্টারমার বলেন, ‘গাজায় অপুষ্ট শিশুর ছবি, হাঁটতে অক্ষম শিশুদের করুণ দৃশ্য আমাদের বিবেক নাড়া দিচ্ছে। এই সংকট আমাদের চোখের সামনে ইতিহাস হয়ে উঠছে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠিয়েছে, এখন স্থলপথে সহায়তার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে বলেছি, দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে বিশ্বাস করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই সমাধান আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। স্বীকৃতি না দিলে হয়তো ভবিষ্যতে আর স্বীকৃত করার মতো কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না।’
স্টারমার বলেন, ‘এটি শুধু লেবার পার্টির নীতি নয়, এটি এখন সময়ের দাবি। প্রতিদিন গাজায় যা ঘটছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা। যুক্তরাজ্য আর চুপ করে থাকতে পারে না।’
আরএ