ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থাপন করা পানির ফিল্টার ভাঙচুর করে তা অপসারণ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। এছাড়া, রোকেয়া হলে দেওয়া শিবিরের ফিল্টার, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভেন্ডিং মেশিন ও ছাত্রদলের দেওয়া ডাস্টবিনও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন হলটির শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া ঢাবির ১৮ হলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ হয়ে হলটির শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাতে হল রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। এ বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যেই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শিবিরের দেওয়া ফিল্টার ভেঙে ফেলতে দেখা গেছে। তাছাড়া, রোকেয়া হলে দেওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের ভেন্ডিং মেশিনে (স্যানিটারি ন্যাপকিন) জুতা মারতেও দেখা গেছে এক শিক্ষার্থীকে। এসময় ছাত্রদলের দেওয়া ডাস্টবিনসহ অন্যান্য সব সংগঠনের দেওয়া সবকিছুই বয়কটের ঘোষণা দেন তারা।
ফিল্টার ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল মারুফ ফেসবুকে লেখেন, আপনারা ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর দেওয়া ফিল্টারের পানি পান করবেন না, এটি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ ও সিদ্ধান্ত, তাতে আপত্তির কিছু নেই। তবে দয়া করে এই সরঞ্জামগুলো নষ্ট কইরেন না। একটি ফিল্টার বসানোর পেছনে সংশ্লিষ্টদের অনেক পরিশ্রম, সময় ও খরচ জড়িয়ে থাকে। আমরা কোথায় কোথায় গিয়ে, কত চেষ্টায় এই ব্যবস্থা করেছি, তা শুধু আমরাই জানি।
তিনি বলেন, আপনি যদি এটি ব্যবহার করতে না চান, সেটি আপনার অধিকার। সেক্ষেত্রে অনুরোধ থাকবে—ব্যবহার না করে সরিয়ে বা ফেরত দিয়ে দিন। তবে সরাসরি নষ্ট করে দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত, যা কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, অন্যের ক্ষতি করে নিজের অবস্থান তুলে ধরা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সবশেষে মারুফ বলেন, আপনার দাবি থাকতেই পারে, এবং তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে উপস্থাপন করাও আপনার অধিকার। তবে প্রতিক্রিয়া জানানোরও একটি গ্রহণযোগ্য সীমা থাকা প্রয়োজন। আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানকার পরিবেশ, মূল্যবোধ ও গৌরব রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার, দায়িত্বশীলতা ও সহনশীলতার সঙ্গে সকল বিষয়ে এগিয়ে যাই।
জয়েনুদ্দিন সরকার তন্ময় নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী রোকেয়া হলের ভেন্ডিং মেশিনে জুতা মারার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, একজনকে দেখলাম ছাত্র অধিকার পরিষদের উপহার দেওয়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিনে জুতা মারছেন। ঐ আপুটার অন্য কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানি না। তবে এই পর্যন্ত ছাত্রী বান্ধব উদ্যোগের অন্যতম কাজ ছিল এই ভেন্ডিং মেশিন। হল প্রশাসন এটার গুরুত্ব বুঝে নাই বিধায় ছাত্র সংগঠন এগিয়ে আসলো।
তিনি আরও বলেন, যদি পছন্দ না হতো, ফিরিয়ে দেওয়াটাই কাম্য ছিল। যেহেতু কনসেনসাসের ভিত্তিতে এই উপহার দেওয়া হয়েছিল একইভাবে ফেরত দেওয়া যেতো। জুতা মারাটা কেমন সংস্কৃতি বুঝলাম না। হল কমিটির বিরুদ্ধে আমিও আওয়াজ তুলি কিন্তু পানির ফিল্টার বা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রতি এমন আক্রোশটা ভিন্নভাবেও দেখানো যেত। এখন যারা রাজনীতি করছে কেও সুপারিওর বা ইনফিরিওর না, প্রত্যেকেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত।
ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিবির নেতা রায়হান উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে, শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক কল্যাণ বিবেচনায় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিক এবং সেই সিদ্ধান্ত যেন সকল রাজনৈতিক সংগঠন মেনে চলে সেটা প্রশাসন নিশ্চিত করবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার বানানো অনুচিত ও সমস্যাজনক। শিক্ষার্থীদের যদি শিবিরের পানির ফিল্টার, অধিকার পরিষদের ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন কিংবা অন্যান্য ছাত্রকল্যাণমূলক উপকরণ সমস্যাজনক মনে হয়, তাহলে তারা সেগুলো বয়কট করার সম্পূর্ণ অধিকার রাখে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় হলো, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে এসব উপকরণ ভাংচুর করা হচ্ছে—এটি অনুচিত ও নিন্দনীয় কাজ। প্রয়োজনে প্রশাসনিকভাবে উপকরণগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে।