আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেটে যাতায়াত করি—কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, কখনো ব্যাংকিং অ্যাপে, কখনোবা অফিসের জরুরি ফাইল আদান-প্রদানে। কিন্তু জানেন কি, এই অনলাইন ভ্রমণ সবসময়ই কারো না কারো নজরে থাকে? ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি), ওয়েবসাইটের ট্র্যাকার বা হ্যাকার—কেউ না কেউ দেখছে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন। এই নজরদারি থেকে রক্ষা পেতেই দরকার পড়ে ভিপিএন, অর্থাৎ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক।
ভিপিএন এমন এক প্রযুক্তি, যা ইন্টারনেটে আপনার যাত্রাকে আড়াল করে দেয়। এটি আপনার আসল আইপি ঠিকানাকে ঢেকে দেয় এবং অন্য একটি ভৌগোলিক অবস্থানের আইপি ঠিকানা ব্যবহার করতে দেয়। ফলে আপনি যেমন গোপন থাকেন, তেমনি প্রবেশ করতে পারেন সেসব ওয়েবসাইটে, যেগুলো আপনার দেশে বা এলাকায় সীমাবদ্ধ। নেটফ্লিক্স, হুলু, বিবিসি আইপ্লেয়ার-এর মতো অনেক জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে থাকা কিছু ভিডিও কনটেন্ট কেবল নির্দিষ্ট দেশের ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত। ভিপিএন থাকলে এই বাধা সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
ভিপিএন শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার অন্যতম উপায়। পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করছেন? হ্যাকাররা আপনার ডিভাইসে নজর দিতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার করলে এই আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়, বিশেষ করে যারা অনলাইন ব্যাংকিং করেন। অফিসের কনফিডেনশিয়াল ডেটা আদান-প্রদান করেন, কিংবা বাড়তি প্রাইভেসি চান, তাদের জন্য ভিপিএন আজকের দিনে একটি অপরিহার্য টুল।
তবে সব ভিপিএন-ই কি নিরাপদ? একদম নয়। অনেক ফ্রি ভিপিএন থাকে যেগুলো আপনার ব্রাউজিং তথ্য সংগ্রহ করে তৃতীয় পক্ষকে বিক্রি করে দেয় বিজ্ঞাপনের জন্য। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নির্ভরযোগ্য ভিপিএন বেছে নেওয়া জরুরি। জনপ্রিয় ও প্রিমিয়াম মানের ভিপিএন-এর মধ্যে রয়েছে: এক্সপ্রেস ভিপিএন—গতি, নিরাপত্তা ও প্রাইভেসিতে শীর্ষে; নর্ডভিপিএন—শক্তিশালী এনক্রিপশন ও সার্ভার নেটওয়ার্ক; সার্ফশার্ক—তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, একসঙ্গে একাধিক ডিভাইসে ব্যবহারের সুবিধা; প্রোটনভিপিএন—ইউরোপভিত্তিক, গোপনীয়তায় অগ্রগণ্য।
বাংলাদেশে ভিপিএন ব্যবহার এখনো বৈধ এবং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে ভিপিএন ব্যবহার করে যদি কেউ বেআইনি কাজ করে, তার দায় সেই ব্যবহারকারীর। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে দায়িত্ব নিয়ে। আর মনে রাখতে হবে, ভিপিএন ব্যবহারের সময় কিছু কিছু ব্যাংকিং অ্যাপ বা সরকারি সাইটে প্রবেশে সমস্যা হতে পারে।
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হলে শুধু পাসওয়ার্ড বদলানোই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয়। আর তা নিশ্চিত করতে ভিপিএন হতে পারে আপনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।