পাবনার ফরিদপুরে জিয়াউর রহমান জিয়া নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, আওয়ামী ঘনিষ্ঠতাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব অভিযোগ তুলে ধরে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন তারা। এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা চলছে।
অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির স্থগিত কমিটির সদস্যসচিব। নেতাকর্মীদের দাবি, জিয়া অদৃশ্য কোনো শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ কেউ মুখ খুলতে সাহস করছেন না। এজন্য হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
জানা যায়, জিয়াউর রহমান জিয়া ফরিদপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির স্থগিত কমিটির সদস্যসচিব তিনি।
জানা যায়, তার বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হয়। উপজেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে গত এপ্রিল মাসে যুবদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ওলামাদলসহ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে গত জুন মাসে উপজেলা বিএনপি ও সব অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগ করা হয়। এসব অভিযোগপত্রে ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণসহ বিভিন্ন নথিপত্র পাঠানো হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর করা এসব আবেদনের অনুলিপি দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়কসহ বিভিন্ন নেতাদের কাছে পাঠানো হয়।

অভিযোগপত্রে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সভাপতি জহুরুল ইসলাম বকুল, সাবেক সদস্যসচিব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম খান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন মাস্টার, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, সদস্যসচিব ফিরোজ ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আমিনুল হক, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন সুজনসহ বিভিন্ন কমিটির নেতারা স্বাক্ষর করেন।
লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন জিয়াউর রহমান জিয়া। এ ঘটনায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এর আগে বিগত সময়গুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন তিনি। বিভিন্ন মিটিং মিছিলে আওয়ামী লীগের হয়ে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাবেক এমপি মকবুল হোসেন ও তার ছেলেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে সেসময় আওয়ামী লীগ বনে যান তিনি। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি রয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চললেও ৫ আগস্টের পর হঠাৎ বিএনপি নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতে শুরু করেন জিয়া। ক্যাডার বাহিনী গড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ নিরীহ সাধারণ মানুষকে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি। দখলে নেন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার, পুকুর ও জমি। নিয়মিত করে চলেছেন সালিশ বাণিজ্য। দোকানপাটসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে তটস্থ স্বয়ং স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও। ফলে মুখ খুলতে সাহস করেন না অন্যান্য ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদৃশ্য শক্তি রয়েছে তার। কাউকেই পরোয়া করেন না তিনি। এই শক্তির বলেই এতসব অভিযোগ থাকার পরও গত ১০ জুন তাকে ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব করে কমিটি দেওয়া হয়। পরে এ সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে সম্প্রতি বিএনপির জেলা ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর ৯ দিন পর ওই কমিটি বাতিল হলেও বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনী দিয়ে উপজেলাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জিয়ার বিরুদ্ধে আগে থেকেই নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। ভিডিওতে বিবস্ত্র অবস্থায় জিয়াকে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। নিজ এলাকা ও বিভিন্ন জায়গার নারীদের সঙ্গে অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকা তার পুরোনো কাজ বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আব্দুল হাকিম বলেন, স্বৈরাচারী শাসনের সময় তাকে কখনো দলীয় কাজে দেখা যায়নি। তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলেছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির বড় নেতা হয়ে গেছেন৷ এরই মধ্যে তিনতলা বাড়ি করেছেন, প্রাইভেট কার কিনেছেন। ড্রাইভার রেখে গাড়ি চালান তিনি। ৫ আগস্টের পর এসব কোথা থেকে কীভাবে এলো?
তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি দখলবাজিসহ নানাভাবে তিনি ব্যাপক টাকা পয়সার মানুষ হয়ে গেছেন। তার নারী কেলেঙ্কারির বিষয়েও সিনিয়র নেতাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। তার এসব কর্মকাণ্ডে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ইমেজ হারাচ্ছে। তাই এসবের বিচার চেয়ে আমরা স্থানীয় বিএনপি ও সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অবশ্যই এর শাস্তি হতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, চাঁদাবাজি ও এ সংক্রান্ত অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার ব্যবসা আছে সেখানকার আয় দিয়ে আমি চলি। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আমাকে সদস্যসচিব করার পর আমাকে বিতর্কিত করার জন্য একটি পক্ষ এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিট করে নোংরা ছবি ও ভিডিও তৈরি করেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারলাম। অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।