আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে। সংখ্যালঘুদের ‘ট্রাম্প কার্ড’ বানিয়ে তারা নানা সময়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে এবং বহুবার সফলও হয়েছে। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তারা চরম আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাতেন। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে সেই দুঃসময় অবসান হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সীতাকুণ্ডে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। এর আগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সীতাকুণ্ড পৌরসদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ রোড হয়ে কেমতলা গজারিয়া দিঘির পাড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সীতাকুণ্ডের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ এলাকা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থস্থান হলেও আওয়ামী লীগ কখনো তাদের অধিকার বা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আন্তরিক ছিল না। বরং তাদেরকে কেবল রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। অথচ ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে—সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন সীতাকুণ্ড জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি রতন কুমার নাথ। সঞ্চালনায় ছিলেন অমলেন্দু কনক ও সুনন্দ ভট্টাচার্য সাগর। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী ভক্ত প্রদানন্দ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জুয়েল চক্রবর্তী, জিতেন্দ্রনাথ নাটু, মনোজ দেবনাথ, বাবুল শাস্ত্রী, গোপাল শর্মা, সুজন মল্লিক, পাপন কৃষ্ণ, মোহন পাল, পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব সালেহ আহমদ, মোজাহের উদ্দিন আশরাফ, শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া, জিয়া উদ্দিন জিয়া, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কামরুল হাসান বাবলুসহ আরও অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসলাম চৌধুরী বলেন, “সীতাকুণ্ড হবে সম্প্রীতির অনন্য অঞ্চল। বাংলাদেশে সব নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এ দেশ সবার—এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশি।” তিনি আরও বলেন, “সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মিলে সীতাকুণ্ডকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলবো। যেন গোটা ভারত তাকিয়ে দেখে—ঐতিহাসিক এই তীর্থস্থানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধরা কতোটা সুসংহতভাবে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।”
স্বামী ভক্ত প্রদানন্দ তার বক্তব্যে বলেন, “অধ্যাপক আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ডবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবকের মতো। সংকটকালে সম্প্রীতি রক্ষার যে নজির তিনি স্থাপন করেছেন, সেটাই আমাদের অনুপ্রেরণা।”