চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের ওয়াকিটকি বার্তা ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার কনস্টেবল অমি দাশকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পুলিশের ভেতরের নিরাপত্তা সংকট। কেবল তিনি একাই নন, তার মতো আরও কেউ বাহিনীতে সক্রিয় আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু হয়েছে তদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ১১ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন এসআই আবু সাঈদ। এর পরদিন কমিশনার ওয়াকিটকিতে নির্দেশ দেন—টহল পুলিশ অস্ত্রসজ্জিত হয়ে বের হবে এবং প্রয়োজনে সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালাবে। খুলশী থানার অপারেটর অমি দাশ গোপনে সেই বার্তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। কয়েকদিন পরই তাকে গ্রেপ্তার করে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি কেবল হঠাৎ করেই ঘটেনি। এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও সংগঠিত নেটওয়ার্ক কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য অমি দাশের কললিস্ট, মোবাইল ডেটা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অমি দাশ স্বীকার করেছেন ভিডিও করার কথা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—তিনি কেন করলেন, কার স্বার্থে করলেন? আশঙ্কা আছে, বাহিনীর ভেতরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত আরও সদস্য থাকতে পারে।” সদর দপ্তরের নির্দেশে এখন ফোর্সের ভেতরে বিশেষ নজরদারি চলছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা অমি দাশ দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশের অভিযানের খবর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে আগেভাগে জানিয়ে দিতেন। এর ফলে একাধিক অভিযান ব্যর্থ হয়, পালিয়ে যায় সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা। রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে ২০১৩ সালে তিনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে টেলিকম ইউনিটে ঢুকে সংবেদনশীল বার্তায় প্রবেশাধিকার অর্জন করেন।
গোয়েন্দাদের ধারণা, অমি দাশ একা নন—তিনি একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন। টেলিকম ও কন্ট্রোল রুমে কর্মরত সদস্যরা গোপন নির্দেশনাগুলোতে প্রবেশাধিকার পান এবং সেগুলো বাইরে পাচার করতে পারেন। প্রমাণ পাওয়া গেছে, কমিশনারের নির্দেশ ফাঁস হওয়ার পরপরই একাধিক অভিযান ভেস্তে গেছে।
প্রাথমিক তদন্তে ইতিমধ্যেই তথ্য পাচারের সত্যতা মিলেছে। আদালতে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অমি দাশ কমিশনারের নির্দেশ ভিডিও করে অনুমতি ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ভিডিও করার জন্য ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়েছে। আদালত তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে এবং মামলার তদন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কৌশলগত বার্তা ফাঁস করা একটি গুরুতর অপরাধ। এ কারণে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হওয়াই যুক্তিযুক্ত।