পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সেনাবাহিনীতে একটি নতুন কাঠামো যোগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
“আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড” বা এআরএফসি নামের এই শাখা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত্রুপক্ষকে বিভিন্ন দিক থেকে আঘাত হানতে সক্ষম হবে বলে তিনি দাবি করেন।
কেন গঠন করা হলো এআরএফসি?
চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান–ভারতের মধ্যে চার দিনব্যাপী সংঘাতের সময় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। সেই সংঘাতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা সামনে আসে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিজ্ঞতাই নতুন রকেট কমান্ড গঠনের পেছনে প্রধান কারণ।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা কৌশলে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বাস্তবে কখন ও কীভাবে এগুলো ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে সবসময় অস্পষ্টতা ছিল। নতুন রকেট ফোর্স মূলত প্রচলিত (নন-নিউক্লিয়ার) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দিকে জোর দেবে।
এআরএফসির ভূমিকা
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এআরএফসি গঠনের ফলে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার একীভূত কমান্ড কাঠামোর অধীনে আসবে। পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে পূর্বের মতোই স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন ও ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির হাতে।
ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক নাঈম সালিক বলেন, এআরএফসি পারমাণবিক নয়, বরং গাইডেড রকেট ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগী হবে। অপরদিকে ব্রিগেডিয়ার তুঘরাল ইয়ামিনের মতে, এ কাঠামোর মাধ্যমে সীমিত সংঘাতেও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি আরও কার্যকর করা সম্ভব হবে।
কোন অস্ত্র এআরএফসির হাতে
বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে ফাতেহ–এক (পাল্লা সর্বোচ্চ ১৪০ কিমি) ও ফাতেহ–দুই (২৫০–৪০০ কিমি) রকেট আছে, যা মে মাসের সংঘাতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া হাতফ–এক ও আবদালি নামের স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও এই কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা প্রায় ৭০০ কিমি) কেবল পারমাণবিক মিশনের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
কৌশলগত গুরুত্ব
গবেষক মনসুর আহমেদ মনে করেন, নতুন রকেট কমান্ড পাকিস্তানকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করেই আঘাত হানার সুযোগ দেবে। এতে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ঘোষিত কৌশল অনুযায়ী, প্রতিপক্ষের আক্রমণের পাল্টা জবাব সবসময় সমানুপাতে নাও হতে পারে, বরং বড় ধরনের প্রতিক্রিয়াও আসতে পারে—যদিও তা পারমাণবিক সংঘাত ডেকে আনার ঝুঁকি তৈরি করবে না।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের মতে, পাকিস্তানের এই উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। ভারতের বারবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সাম্প্রতিক সংঘাত পাকিস্তানকে আরও কার্যকর প্রচলিত আক্রমণক্ষমতা গড়ে তুলতে বাধ্য করেছে।
একজন সাবেক পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “রকেট ফোর্স গঠনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, শুধু পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রতিরক্ষা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ভারতের ব্রহ্মোস হামলার মুখে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাই এখন সবচেয়ে জরুরি।”