উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ সম্পর্কিত রিট নিষ্পত্তি হলেও ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আইনি পথে ব্যর্থ হওয়া এক গ্রুপ এখন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চক্রান্ত করছে। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন অঘটন ঘটানোর জন্য তারা সক্রিয় রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো ডাকসু নির্বাচনকে ব্যাহত করে শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে নিজের স্বার্থে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা এ বিষয়ে সতর্ক। তারা জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে এবং কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা প্রতিহত করা হবে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গত রোববার রাত ১০টায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর এই নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শিক্ষার্থীদের এই ভোটকে কেন্দ্র করে দেশের সাধারণ মানুষও আগ্রহ দেখাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এবার ডাকসুতে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের অংশগ্রহণ হবে। তবে উচ্চ আদালতে একাধিক রিট, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, নারী প্রার্থীদের প্রতি হিংসা এবং বিভিন্ন ধরনের অশান্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করেছে।
তদন্তে জানা গেছে, ডাকসুসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি গ্রুপ স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা মনে করে, ডাকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করা গেলে ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হবে। ফলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের পথও সহজে বাধাগ্রস্ত করা যাবে।
ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে পুরো নির্বাচনকে নিয়ে আসা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। পরাজিত শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তপ্ত করতে চায়। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতেই নির্বাচন হবে। ডাকসু নির্বাচনের প্রতি কোনো আপস হবে না। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক থাকতে হবে।”
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, “ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছেই। আমাদের দায়িত্ব হলো সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সচেতন করা। যদি আমরা দায়িত্বশীল থাকি, সমস্ত ষড়যন্ত্র চক্রান্ত নস্যাৎ করা সম্ভব। আমরা জুলাইয়ের প্রজন্ম; জুলাইয়ে আমরা খুনি হাসিনাকে সরিয়েছি। যারা এখানে আবার হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাবে, তাদের ফল হাসিনার চেয়ে খারাপ হবে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহের মধ্যে সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।”
ছাত্রদলের প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, “শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পরে গণতান্ত্রিকভাবে ভোট দিতে পারবে। তবে বিভিন্ন স্তরে যে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করছে। শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপে ভোটের মাঠ উৎসবমুখর করা সম্ভব। যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের শিক্ষার্থীরা লাল কার্ড দেখাবে।”
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান বলেন, “সব প্রার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। তবে নির্বাচনের নামে কৃত্রিম সংকট ও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ টেলিভিশন টক শোতে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “যারা বাংলাদেশে বসে দিল্লির রাজনীতি করে, তারা ও তাদের দোসররা ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার নানা চক্রান্ত করছে। তারা জানে, নির্বাচন ব্যর্থ হলে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হবে, শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি ক্ষিপ্ত হবে এবং ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলা হবে।”