ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল সবার জন্য চমক বয়ে এনেছে। দীর্ঘদিন গোপনে সংগঠন চালানোর পর প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবার বাজিমাত করেছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিবিরের ভূমিধস বিজয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রগতিশীল আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠনের এমন জয়ে নতুন চিন্তার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচন কেবল উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণই ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যও ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ফলাফল থেকে দেশের আগামী দিনের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে, জাতীয় রাজনীতিবিদদের উচিত হবে ডাকসুর এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া।
১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করা ছাত্রশিবির গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন পরিচালনা করতে হয়েছে অনেকটা গোপনে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের পর বামঘরানার সংগঠনগুলোর যৌথ প্রতিরোধের মুখে এখানে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে শিবির নতুন করে প্রকাশ্য রাজনীতির ঘোষণা দেয় এবং মাত্র এক বছরের মাথায় ডাকসুর শীর্ষ নেতৃত্ব দখল করতে সক্ষম হয়।
এই নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ মোট ২৮ পদের মধ্যে ২৩টিতে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। অন্যদিকে বামপন্থি ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক ছিল। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা কোনো পদেই জিততে পারেননি।
বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই প্রগতিশীল রাজনীতির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটে শিবিরের এমন সাফল্য দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। এটি ভবিষ্যতে মতাদর্শিক সংঘাতকে তীব্র করলেও যদি আপস-সমঝোতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, তবে তা দেশের জন্য শুভ হবে।”
সাবেক নেতারাও ডাকসুর এ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা বলে অভিহিত করেছেন। নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম নির্বাচনের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা সব মত ও আদর্শের সহপাঠীদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।”