দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পুরো ক্যাম্পাসে নির্বাচনী উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। যদিও সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের কারণে সেই আনন্দে সাময়িক ভাটা পড়েছিল, তবে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হতেই শিক্ষার্থীরা আবারও চাকসুকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এবারের সপ্তম চাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা একক, স্বতন্ত্র ও সমন্বিত বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নেবেন। শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতারা এখন ব্যস্ত সম্ভাব্য হিসাব-নিকাশে। জানা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে প্রস্তুত।
নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীরা। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ইব্রাহিম হোসেন রনি, সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা ও শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফকে নিয়ে শিক্ষার্থীরা সরব আলোচনা করছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারা সম্মুখ সারিতে ভূমিকা রাখেন। যদিও কোন পদে কে লড়বেন তা এখনো ঠিক করেনি সংগঠনটি। জানা গেছে, তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গড়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে নারী শিক্ষার্থী, আহত আন্দোলনকারী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও উপজাতি শিক্ষার্থীরাও থাকতে পারেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চবি শাখা থেকেও কয়েকজন নেতা আলোচনায় আছেন—সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসান আহমেদ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী, নুজহাত জাহান ও শ্রুতি রাজ চৌধুরী। জুলাই আন্দোলনে নোমানের ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হলেও এখনো পদ বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ ভিপি পদে লড়তে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সংগঠনের সদস্য সচিব আল-মাসনুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতানুল আরেফিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার নাফিজও আলোচনায় রয়েছেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি শাখা এবার এককভাবে অংশ নেবে। তাদের সম্ভাব্য প্যানেলের নাম হতে পারে ‘চাকসু ফর রেপিড চেঞ্জ’ বা ‘চাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’। মনোনয়ন ফরম কিনবেন ১৬ সেপ্টেম্বর। ভিপি ও জিএস পদে এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারিত না হলেও আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন, সচিব রোমান রহমান এবং যুগ্ম সচিব মো. সবুজকে কেন্দ্র করে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে জোটে যেতে সংগঠনটি রাজি রয়েছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতনতা শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান রবিন ভিপি, বর্তমান সভাপতি আবদুর রহমান জিএস, সেক্রেটারি রাকিবুল ইসলাম সমাজসেবা সম্পাদক এবং আনোয়ার হোসেন দপ্তর সম্পাদক পদে লড়বেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচন করবে। আজ রোববার তারা প্যানেল ঘোষণা করবে। এতে ভিপি পদে থাকছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষী অবরোধ, জিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ এবং এজিএস পদে দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির।
এদিকে জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধারণকারী রাজনৈতিক কর্মী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্টদের উদ্যোগে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের প্রস্তুতি চলছে। মাহফুজুর রহমান ভিপি এবং রশিদ দিনার জিএস পদে লড়তে পারেন। ১৭ সেপ্টেম্বর এ প্যানেল ঘোষণা হবে, যেখানে আট নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কিছু চমক থাকবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি সাবেক সাংবাদিক নেতা মোহাম্মদ আজহার ও আহমেদ জুনায়েদ যথাক্রমে ভিপি-জিএস পদে স্বতন্ত্রভাবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ২ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৬৬ জন—এর মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ২৫ জন এবং নারী ১০ হাজার ৮৪১ জন।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়ন জমা ও যাচাইয়ের সময় মিছিল-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ। সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নেওয়া যাবে। প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, পজিটিভ ফল হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। প্রচারণা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলতে পারবে, তবে সন্ধ্যার পর মাইক ব্যবহার করা যাবে না। অনুমতি নিয়ে সীমিত আকারে সভা-সমাবেশ করা যাবে। পোস্টার শুধু সাদা-কালো এবং নির্দিষ্ট আকারের হতে হবে। আচরণবিধি ভাঙলে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে আজ রোববার। ১৫–১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে ২১ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।