বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজুল ইসলাম আবারও আলোচনায় এসেছেন আবরার ফাহাদের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তা হিসেবে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে।
তিনি বুয়েটে পড়াকালীন সময়েই ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন—যা নিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আবারও আলোচনার ঝড় উঠেছে।
নির্মম নির্যাতনের শিকার এক মেধাবী শিক্ষার্থী
সিরাজুল ইসলাম বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময় তিনি রাজনৈতিক কারণে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হন।
সেই সময় বুয়েটের হলগুলোতে ইসলামপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন চলছিল। সিরাজুল ইসলাম সেই নির্যাতনের অন্যতম ভুক্তভোগী ছিলেন।
ঘটনার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসেবে শনাক্ত করে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্রের জীবন প্রায় ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, তবে তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান—যা অনেকের মতে একান্তই আল্লাহর রহমত।
বুয়েটে ইসলামপন্থী শিক্ষার্থীদের দমন
২০০০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বুয়েটে ভিন্নমতাবলম্বী ও ইসলামচিন্তায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন ব্যাপক আকার নেয়। অনেকে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বা হলে বাইরে থাকতে শুরু করেন।
সিরাজুল ইসলামও একই কারণে হল ত্যাগ করে বাইরে বসবাস করতেন। কিন্তু পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসে এলে ছাত্রলীগের হাতে আবারও নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
এই ঘটনার প্রতিধ্বনি আজও বুয়েটের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে রেখেছে।
আবরার ফাহাদের শাহাদাৎবার্ষিকী সেমিনারে উপস্থিতি
সম্প্রতি শহীদ আবরার ফাহাদের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে সিরাজুল ইসলামকে বক্তা হিসেবে রাখা হয় বুয়েটের নির্যাতনের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নয়।
আয়োজকরা জানান, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে একজন “নির্যাতিত ও বেঁচে থাকা সাক্ষী” হিসেবে—যিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বুয়েটে ভিন্ন মত পোষণ করলেই কেউ নিরাপদ ছিল না।
এক প্রতীকী সাক্ষ্য
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে—“বুয়েটে এমন ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি কিভাবে তৈরি হলো?”—তারই এক জীবন্ত সাক্ষ্য হিসেবে সিরাজুল ইসলামের নাম বারবার ফিরে আসে।
তাঁর বেঁচে থাকা এবং পরবর্তীকালে সামাজিকভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা অনেকের কাছে এক প্রতীকী বার্তা—সত্য ও আদর্শকে নির্মম নির্যাতন দিয়ে দমন করা যায় না।