জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাত্র চার মাস দূরে। রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা বারবার আশ্বস্ত করছেন—নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হবে। তবে ঠিক এই সময়েই সরকারপক্ষ থেকেই ‘সেফ এক্সিট’ শব্দটি আলোচনায় উঠে আসায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক এবং আস্থার সংকট।
সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন এবং নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছেন।
নাহিদের এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। টেলিভিশনের টক শো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় এটি প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ভেতরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেকেই এখন ‘সেফ এক্সিট’ ভাবছেন। তারা যদি বিশ্বাস করতেন যে তারা জনগণের অভ্যুত্থানের ফসল, তবে এমন বিচ্যুতি হতো না।”
তার বক্তব্যের সূত্র ধরে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় নেতা সারজিস আলমের কাছ থেকে। তিনি বলেন, “যারা শুধু দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়, তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। দেশের মানুষ তাদের ধরবেই।”
এনসিপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তুলেছে তারা। দলটির দাবি, এ কারণেই ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ সামনে এনেছে তারা।
সরকারকে সমর্থনকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা মনে করছেন, কয়েকজন উপদেষ্টা ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছেন এবং নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “ইউনূস সরকারের কিছু গুরুতর ভুল ছিল। জনগণ অভ্যুত্থানের পর যে ফল আশা করেছিল, তা পায়নি। তাই এখন উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ আলোচনায় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জনপ্রিয় হলেও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষদের বাদ দিয়ে এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঘনিষ্ঠদের সরকারে এনেছেন—এটা বড় ভুল।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “সরকার গঠনের পর উপদেষ্টাদের থেকে সংস্কার ও কল্যাণমুখী কাজের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে। তারা সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।”
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সেফ এক্সিট প্রসঙ্গ এসেছে উপদেষ্টাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ও আচরণের কারণে। সরকার প্রথমে নিরপেক্ষ থাকলেও পরে কিছু দলের পক্ষ নেয়ার ফলে মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে।”