গত এপ্রিলের ১১ থেকে ১৩ তারিখ তুরস্কের আন্তালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তুরস্কে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। আন্তালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশগ্রহণের পর, তারা ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারা সফর করেন।
এই সফরকালে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভঙ্গ এবং অবৈধভাবে অর্থনৈতিক লেনদেনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ১৫ এপ্রিল আঙ্কারায় অবস্থানকালে মাহফুজ আলম রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভঙ্গ করে একাধিক সন্দেহভাজন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তুরস্কে বাংলাদেশী প্রবাসী নাজমুল ইসলাম (রায়হান) এর সহায়তায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এমনকি অনৈতিক লেনদেন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, নাজমুল ইসলাম ইতিপূর্বে ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন বিজিপির মূল সংগঠন আরএসএস-এর দিল্লি বেইজড থিংক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এর কৌটিল্য ফেলোশিপ (Kautilya) প্রজেক্টে কাজ করেছেন। এবং নাজমুল ইসলামের স্ত্রী তুরস্কের নাগরিক। এমন একজন ব্যক্তির সহায়তায় রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
উপরোক্ত অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ভিজিট করে। দেখা যায় তিনি ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করেন, কিন্তু সেখানে নাজমুল ইসলাম থাকলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কিংবা দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত নেই। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেদিন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বাহিরে ছিলেন, দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তাকে সাথে রাখতে চাননি। রাষ্ট্রীয় সফরে এসে এভাবে প্রটোকল ভেঙে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন একজন ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে বৈঠক করাকে মাহফুজ আলমের তার শপথ ভঙ্গ করার শামিল।
এছাড়াও, অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ভবিষ্যতে তুরস্কে “সেকেন্ড হোম” করার পরিকল্পনায় নাজমুল ইসলামের মাধ্যমে কিছু আবাসন প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথেও বৈঠক করেছেন। আরো অভিযোগ পাওয়া যায়, মাহফুজ আলমের বন্ধুর স্ত্রী ইস্তানবুলের মারামারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাধ্যমেও টাকা মোটা অংকের ডলার পাচারের সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।

এই অভিযোগগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট কমরেড মাহমুদ গতকাল এক পোস্টে লিখেন, “মাহফুজ সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে তুরস্কে আসছিলো। প্রটোকলের বাহিরে তার এলাকার এক বড় ভাই, উনার সাথে গোপনে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেছে। সরকারি প্রটোকল রেখে বিভিন্ন বাসায় অবস্থান করে। জানা যায় তার অবৈধ টাকাগুলো অষ্ট্রেলিয়ার পর এবার তুরস্কে কাজে লাগানোর প্রজেক্ট হাতে নিছে। প্রথমদিকের সব টাকা অষ্ট্রেলিয়া ইনভেস্ট করেছে। এখন নতুনভাবে তার্কিতে টাকা পাঠাবে। বিষয়টি তদন্তের জন্য তার্কি দুতাবাস, তার থাকার হোটেলে খোঁজ নিলেই পরিস্কার হইতে পারবেন মাহফুজ কোথায় থেকেছে, কাদের সাথে চলেছে।”
উল্লেখ্য, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ছোট ভাই মাহবুব আলম অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন, অভিযোগ রয়েছে, সেখানেও মাহফুজ আলম রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচারে জড়িত রয়েছে।