ভারতের ‘আগ্রাসনের’ জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের প্রতি সর্বসম্মত সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্ট। সর্বদলীয় ঐক্যের বার্তা দিয়ে আইনপ্রণেতারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর দৃঢ় অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ৭ই মে ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে হামলা চালায়। তাতে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপর থেকেই শুরু হয় পাকিস্তান-ভারত দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার নতুন অধ্যায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ৩টি ছিল উন্নত রাফাল, এবং বেশ কতগুলো ড্রোন ধ্বংস করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, ভারত এখনও নিয়মিতভাবে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ড্রোন পাঠাচ্ছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে ইসরাইলে নির্মিত আইএআই হেরন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ জাতীয় পরিষদে বলেন, ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের যথাযথ জবাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের বাহিনী লাইন অব কন্ট্রোল, সীমান্ত ও ওয়ার্কিং বাউন্ডারিতে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী শুধু আকাশে নয়, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো ভারতীয় ড্রোনও সফলভাবে প্রতিহত করছে। আসিফ আরও বলেন, আমাদের কৌশলগত সাফল্যের পেছনে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন রয়েছে। চীন, আজারবাইজান ও তুরস্ক আমাদের পাশে আছে, যেখানে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তাদের থেকে দূরে সরে গেছে। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং ২০০ ভাগ সক্ষমতা নিয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) নেতা আসাদ কায়সার জাতীয় পরিষদে বলেন, দেশ যখন সঙ্কটে পড়ে, তখন আমরা দল-মতের পার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই। তিনি বলেন, সরকার পিটিআই নেতাদের আটক ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। আমরা যুদ্ধাবস্থায় থেকেও ধৈর্য ধরছি, কিন্তু সরকার দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, তার কোনো ক্ষতি হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে। জমিয়তে উলেমায়ে ইসলাম ফজল (জেইউআই-এফ)-এর আমির মাওলানা ফজলুর রহমান ঘোষণা দেন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার সম্মানে আমরা ‘প্রতিরক্ষা দিবস’ পালন করছি। তিনি জানান, ১১ই মে পেশোয়ারে এবং ১৫ই মে কোয়েটায় মিলিয়ন মার্চ হবে। তিনি বলেন, সরকার যখন সিভিল ডিফেন্সে তরুণদের আহ্বান জানায়, আমরা আমাদের আনসার-আল-ইসলাম বাহিনীকে সে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি দাবি করেন, মাদ্রাসার ছাত্ররাই এখন পাকিস্তানের প্রথম সারির প্রতিরক্ষা লাইন।
বিদেশনীতি প্রসঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কোনো কূটনৈতিক মিশন নেই, শুধু ফোনে যোগাযোগ চলছে। আমাদের উচিত ছিল চীন, সৌদি আরব, ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করা। তিনি ভারতীয় আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ভারত মসজিদ, মাদ্রাসা ও বেসামরিক স্থানে রকেট হামলা চালিয়ে শহীদের রক্ত ঝরিয়েছে। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী বীরত্ব ও দক্ষতায় দেশের মর্যাদা রক্ষা করেছে। ফেডারেল মন্ত্রী রানা তানভির ভারতের আগ্রাসনকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করে বলেন, ভারত নিজের তৈরি করা অজুহাতে পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের কাশ্মীর সংবিধান পরিবর্তনের সময়ই আমাদের জোরালো প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। ভারত ও ইসরাইলের সম্পর্ক নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারত এখন ইসরাইলের পরামর্শে ফেঁসে গেছে এবং এখন তাকে পাকিস্তানের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তানভির বলেন, মানুষ আমাদের ফোন করে সীমান্তে যেতে চায়। আমাদের বাহিনী অত্যন্ত পেশাদার, আমাদের আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আছে। তিনি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমানের সক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, জেএফ-১৭ এর সক্ষমতা এফ-১৬ এর চেয়েও বেশি। শেষে তিনি ভারতকে সতর্ক করে বলেন, আসল শক্তি অস্ত্র নয়, অস্ত্র চালানোর পেছনে যে মানুষ আছে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাফাল ভূপাতিত করার কৃতিত্ব আমাদের পাকিস্তান বিমান বাহিনীর।
মানবজমিন