দেশের অন্যতম ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের অবহেলা, দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। যোগ্যদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ, শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত নানা অনিয়ম, বাজেট বরাদ্দ না পাওয়া ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি স্থবির হয়ে যায়।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এনে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়। নতুন প্রশাসনের নানা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে, যা মাদরাসাসংশ্লিষ্টদের মাঝেও আশাবাদ তৈরি করেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজ মহল এখনো সক্রিয়। বিশেষত নতুন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই একটি চক্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিচয়হীন অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এতে প্রায় ছয় হাজার পরীক্ষার্থী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বলেন, নিয়ম মেনে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। পরিচয়হীন অভিযোগকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি গঠন করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপমানজনক।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা এবং বাইরে থেকে সুবিধাভোগী মাদরাসা শিক্ষকরা এসব ষড়যন্ত্রে জড়িত। তারা পুরোনো দুর্নীতি ও অনিয়মে ফিরে যেতে চায়, যাতে পূর্বের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা যায়।
ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী জানান, পূর্ববর্তী প্রশাসনে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। উপাচার্য থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইতোমধ্যে তদন্তে এসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে এবং কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউজিসি পূর্বের দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন অভিযোগও তদন্তে যুক্ত করায় প্রশ্ন উঠেছে—পূর্ববর্তী অনিয়মের তদন্ত শেষ হবে কি না।
ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ বলেন, মাদরাসা খাতের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, গবেষণা জার্নাল প্রকাশ ও এমফিল-পিএইচডি চালুর মতো ইতিবাচক পদক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চলমান ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠেকানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার দুর্নীতি ও দলীয়করণের পথে ফেরানো। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।