সুখী দাম্পত্য জীবন আল্লাহর একটি অনন্য নিয়ামত। এটি শুধুমাত্র ভালোবাসা, সম্মান ও দায়িত্বের মেলবন্ধনেই গড়ে ওঠে। স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ক যাতে গভীর ও মজবুত হয়, সেজন্য ইসলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো মেনে চললে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হয়।
১. আত্মিক সংযোগ বৃদ্ধি করা
বিয়ে শুধু সামাজিক চুক্তি নয়; এটি প্রেম, ভালোবাসা ও মানসিক প্রশান্তির এক গভীর বন্ধন। আল্লাহ বলেন, “আর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্য রয়েছে নিদর্শন।” (সুরা রুম : ২১)
২. গোপনীয়তা রক্ষা করা
স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ক ব্যক্তিগত এবং তা গোপন রাখা আবশ্যক। নবীজী (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের পর তা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে।” (মুসলিম : ১৪৩৭)
৩. ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
দাম্পত্য জীবনে ভুল হতে পারে। এই সময় ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা প্রদর্শন সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। নবীজী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করেন।” (মুসলিম : ২৫৮৮)
৪. একে অপরের সহযোগী হওয়া
পরিবারের কাজে একে অপরকে সাহায্য করা সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে। নবীজী (সা.) ঘরের কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। (বুখারি : ৬৭৬)
৫. আনন্দ ভাগাভাগি করা
একসাথে সময় কাটানো, ভ্রমণ বা খেলার মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করা দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। (আবু দাউদ : ২৫৭৮)
৬. প্রশংসা করতে শেখা
স্ত্রী বা স্বামীকে প্রশংসা করলে সম্পর্কের মান বৃদ্ধি পায়। নবীজী (সা.) স্ত্রী আয়েশাকে অন্যান্য নারীর তুলনায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রশংসা করতেন। (বুখারি : ৩৭৬৯)
৭. স্ত্রীর প্রতি কষ্ট না দেওয়া
স্ত্রীকে আঘাত না করা এবং তাকে সম্মানিত রাখা সুখী দাম্পত্যের মূল চাবিকাঠি। নবীজী (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন স্বীয় স্ত্রীকে গোলামের মতো প্রহার না করে। অথচ দিনশেষে তার সঙ্গেই সে শয্যা গ্রহণ করবে।” (বুখারি : ৫২০৪)
৮. উত্তম আচরণে মনোযোগী হওয়া
পরস্পরের প্রতি সদাচরণ সম্পর্ককে মজবুত করে। নবীজী (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করে। আর আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম আচরণ করি।” (তিরমিজি : ৩৮৯৫)
উপসংহার:
এই আটটি সুন্নাহ মেনে চললে দাম্পত্য জীবন হয় বিশ্বাস, ভালোবাসা, দয়া ও সহযোগিতার সমন্বয়ময়। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে সুখী ও কল্যাণময় পরিবার।
