আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তৎপরতা ও প্রস্তুতি। বিশেষ করে গত ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে ঘিরে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে ভিন্ন মাত্রায়। তবে প্রত্যাশার পাশাপাশি অনিশ্চয়তা ও শঙ্কাও বিরাজ করছে।
এনসিপির নেতারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অনেক রাজনৈতিক দল প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে কি না—সেসব নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ভাষণে নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও ইতিহাসে স্মরণীয় করে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করেছেন, এটি হবে বাংলাদেশের সেরা নির্বাচন। ইসির পক্ষ থেকেও শিগগির রোডম্যাপ প্রকাশের ঘোষণা এসেছে।
তবে রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ রয়েই গেছে। অনেকে মনে করছেন, এখনো প্রশাসনকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা যায়নি, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি এবং সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইস্যুতে প্রায় সব দলই একমত হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলগুলো সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ বিষয়ে চাপ আরও বাড়বে।
সরকার জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আট লাখের বেশি সদস্য, এর মধ্যে সেনাবাহিনীও থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও জোর দিয়ে বলেছেন, এটি হবে ইতিহাসসেরা সুন্দর নির্বাচন। তবে তা নিশ্চিত করতে হলে নিরপেক্ষ প্রশাসন, কালো টাকা ও পেশিশক্তিমুক্ত পরিবেশ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ দেওয়া অপরিহার্য।
বিভিন্ন দল আশাবাদী হলেও সংশয়ও প্রকাশ করছে। কারও মতে, সরকার ইচ্ছা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। আবার কারও মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনের পক্ষপাত ও অনিশ্চয়তা কাটানো না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে এগোয়, তাই এখন সবার দৃষ্টি।